মানসাঙ্ক
৳ 267.00 ৳ 210.00
ঢাকার বাইরের ডেলিভারি খরচ: ৳ 100.00
ধর্ষণের কারণ সম্পর্কে আমাদের সমাজে কয়েকটি কমন ডিসকোর্স প্রচলিত। প্রথমটা হলো, ধর্ষণের জন্য মেয়েদের পোষাকই দায়ী। প্রচলিত আরেকটা ডিসকোর্স হলো, ধর্ষণের জন্য ছেলেদের মানসিকতাই দায়ী। একটা মেয়ের পোষাক কখনোই এর জন্য দায়ী হতে পারে না।
বলাবাহুল্য এ দুধরনের বক্তব্যের পেছনেই শক্তিশালী কোনো প্রমাণ অনুপস্থিত। পোষাকই দায়ী, একথা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না, কারণ দেখা গেছে বোরকা পরিহিতাও ধর্ষকের নির্মম থাবা থেকে নিরাপদ নন। আর যদি ধর্ষকের মানসিকতাই একমাত্র দায়ী হয় তবুও প্রশ্ন থাকে কী করে তার মাঝে এই নির্মম প্রবনতা জেগে উঠলো।
এ প্রশ্নের জবাব খোঁজা দরকার ছেলে মেয়ে উভয়ের নিরাপত্তার জন্যই। ইতিপূর্বে এ বিষয়গুলো নিয়ে বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো গবেষণাই হয়নি বলতে গেলে। ফলে ধর্ষণের হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলেও এটি নিয়ন্ত্রনের কোনো রোডম্যাপ আমাদের সামনে ছিল না। তরুণ লেখক ডা শামসুল আরেফিন এই বিষয়টি নিয়ে রচনা করেছেন অনবদ্য গ্রন্থ মানসাঙ্ক’।
লেখক - ডা. শামসুল আরেফীন
F –
#বুক_রিভিউ (ভালো রিভিউ বড় হলেও পড়া যায়)
.
মানুষকে আল্লাহ তায়ালা স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়ে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। এই ইচ্ছাশক্তি কিন্তু আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য আমানত স্বরূপ। এই আমানতের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমেই আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়া সম্ভব। কিন্তু মানুষের স্বভাব চরিত্র স্বাধীন হওয়ায় কিছু মানুষ আল্লাহর দেখানো পথ থেকে সরে যেতে শুরু করে। তাদেরকে পেয়ে বসে সমাজের অশ্লীলতা, অন্ধ গোড়ামি-সহ নানা রকম ইস্যু। কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ে খুন, রাহাজানি, ডাকাতি, এমনকি ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির মতো ভয়ংকর সব অপরাধের সাথে। ধর্ষণ যে কতটা ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে তা একটু বাস্তবতার দিকে তাকালেই দেখা যায়।
.
বর্তমানে টিভি ও পত্রিকা খুললেই একটি খবর মোটাদাগে চোখে পড়ে তা হলো অমুক জায়গায় অমুক মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। ৪ বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৬০ বছরের বৃদ্ধা এমনকি গর্ভবতী নারীরাও রক্ষা পাচ্ছে না এই ধর্ষণের ছোবল থেকে। এর জন্য ছেলেরা দোষ দেয় মেয়েদেরকে। মেয়েদের অভিযোগের তীর আবার ছেলেদের দিকে। মেয়েরা যেমন বলে ধর্ষণের জন্য ছেলেদের লালসাপূর্ণ ও কামনাময় দৃষ্টি দায়ী। ছেলেরা আবার বলে এর জন্য মেয়েদের বেপর্দা ভাবে চলাফেরাই প্রধান কারণ।
.
বর্তমানে ধর্ষণ প্রতিরোধে তো কত সচেতনতা সভা, আলোচনা সভা, সেমিনার হচ্ছে। ধর্ষকের শাস্তি ও ধর্ষিতার ন্যায় বিচারের দাবিতে মিছিল মিটিং, মানব বন্ধন, অবরোধ হচ্ছে। নিত্যনৈমিত্তিক কত আইনই তো তৈরি হচ্ছে ভয়ংকর ব্যাধি এই ধর্ষণের কবল থেকে সমাজকে রক্ষা করতে। কিন্তু এতকিছুর পরও আমরা দেখতে পাই ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি তো কমছেই না। এতসব করেও ফলাফল প্রায় শূন্যের কোঠায়। পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই এই ধর্ষণ নামের এই ব্যাধি কমে যাওয়া তো দূরের কথা বরং উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েই চলেছে। তাহলে এই ধর্ষণের কারণ কি? কেন সমাধান হচ্ছে না? কীভাবে পাওয়া যাবে ধর্ষণ-সমস্যার সমাধান?
.
এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে পড়তে হবে মানসাঙ্ক বই টি। লেখক ডা. শামসুল আরেফীন। আমার মনে হয় ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি নিয়ে এত বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের সাহায্যে রচিত এই বইটিই প্রথম।
.
#কি আছে মানসাঙ্ক বইতে?
বই খুললে দেখা যায় বইতে ধর্ষণ সম্পর্কে প্রধান তিনটি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
প্রথম অংশ : ধর্ষণ কি? এবং এর কারণ কি?
অমরা অনেকেই মনে করি মেয়েদের উশৃঙ্খল চলাফেরার জন্যই বুঝি ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলো ঘটে। কিন্তু মানসাঙ্ক বইটি পড়লে জানা যায় মেয়েদের উশৃঙ্খল চলাফেরা ধর্ষণের অনেক গুলো কারণের মধ্যে একটি। প্রধানত ধর্ষণের জন্য প্রধান তিনটি কারণ দায়ী। যেমন (১) মেন্টাল সেট-আপ (সেক্স উত্তেজনার মানসিকতা)
(২) উপযুক্ত পরিবেশ
(৩) উদ্দীপক(ধর্ষণ করার জন্য সামনে যা কিছু পাওয়া যায় যেমন নারী,শিশু, পশুপাখি ইত্যাদি )
লেখক রেফারেন্স-সহ দেখিয়েছেন এই তিনটি কারণ এক সাথে হলে ধর্ষণ হবেই।
.
২য় অংশ : এই অংশে লেখক দেখিয়েছেন উন্নত বিশ্বে মনে করে সহশিক্ষা-ব্যবস্থা চালু করলে এবং ফ্রি সেক্স এর অনুমতি দিলেই ধর্ষণের মতো ঘটনা গুলো আর ঘটবে না। আসলে এসব যে ধর্ষণের গতিপথকে রোধ করতে পারে না তা রেফারেন্স ও প্রমাণ সহ দেখতে হলে তো মানসাঙ্ক বইটি পড়তেই হবে।
.
৩য় অংশ : এত কিছুর পরেও যখন ধর্ষণ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না তখন বুঝতে হবে সমাধানের জন্য নেয়া পদক্ষেপ গুলো ভুল ছিলো। কিন্তু আসল সমাধান তো ইসলামে অন্য পদ্ধতি প্রয়োগ করলে তো সমাধান সম্ভব নয়। এই অংশে লেখক বিভিন্ন যুক্তি ও বৈজ্ঞানিক রেফারেন্স এর মাধ্যমে দেখিয়েছেন ইসলামী অনুশাসন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিলেই ধর্ষণ সম্পর্কিত সকল কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করা সম্ভব। কারণ ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। ধর্ষণ প্রতিরোধে তো অনেক সুপারিশ, পরিকল্পনা কমিটি আলোচনা সভা হয়। কিন্তু তা বাস্তবে প্রয়োগ করা হয়না । ধর্ষণ সমস্যার প্রকৃত সমাধান যে ইসলামেই নিহিত তা সুশীল সমাজ আজ বুঝতে চায় না। সর্বক্ষেত্রে ইসলামের বিধানের মধ্যেই রয়েছে ধর্ষণ নামক এই সমস্যার প্রকৃত সমাধান। শেষ কথা হলো পেতে হলে সমাধান ফিরে এসো ইসলামে।
.
#বইটি কাদের জন্য :
(১) যারা বিজ্ঞানের বিভিন্ন রেফারেন্স।-সহ ধর্ষণের কারণগুলো সম্পর্কে অবহিত হতে চান বইটি তাদের জন্য।
(২) যারা মুসলিম, কুরআন সুন্নাহতে বিশ্বাসী তাদের বইটি অবশ্যই পড়া উচিত।
(৩) যারা শিক্ষকতায় কাজ করেন বর্তমান সমাজব্যবস্থায় ধর্ষণ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভের জন্য বইটি পড়া উচিত।
(৪) যারা পরিপূর্ন পর্দার-সহ চলাফেরা করেন বা করতে ইচ্ছুক বইটি অবশ্যই তাদের পড়া উচিত।
.
#ব্যক্তিগত গত অনুভূতি :
বইয়ের প্রতিটি পাতায় রয়েছে লেখকের কঠোর পরিশ্রমের ছোঁয়া।
সত্যি কথা বলতে বইটি পড়ে আমি নির্বাক হয়ে গেছি। ধর্ষণ সম্পর্কে বই লিখতে এত বিপুল পরিমানে তথ্য, প্রমাণ, ও রেফারেন্স দিয়ে লিখা মনে হয় ডা. শামসুল আরেফীনের পক্ষেই সম্ভব।
#প্রিয় উক্তি
(১) শুধু কণ্ঠ যতটুকু আকর্ষণ করবে দেখা করে কথা বলা ততটা করবে না।
(২) আপনি শাস্তির কথা যতই শোনান সেটা সময়ের সাথে সাথে গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে। কিন্তু একবার যদি শাস্তি স্বচক্ষে দেখিয়ে দিতে পারেন তাহলে তা বিস্তারিত ভাবে দীর্ঘদিন মনে থাকবে।
(৩) প্রতিটা ধর্ষণের পর বিশেষ মহল থেকে একটাই দাবি ভেসে আসে—ছেলেদের নিজেদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। আমি কিন্তু ওনাদের এই দাবির সাথে সম্পূর্ণ একমত। অবশ্যই ছেলেদের নিজেদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু মানসিকতা পরিবর্তন তো ফিউজ হয়ে যাওয়া বাল্ব না, যে বাজার থেকে আরেকটা মানসিকতা কিনে এনে বদলে দিলাম, আর হয়ে গেল।
#সমালোচনা :
বইটি এত সুন্দর ভাবে সাজানো গোছানো যে সমালোচনার মত তেমন কিছুই নেই। তবে—
(১) লেখক যে কারণগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন তাতে দেখা যায় এত% ধর্ষিত হয়। বাকি আরো ২৫ বা ৩০% ক্ষেত্রে ধর্ষণ সংঘটিত হয় না। এসব ক্ষেত্রে কেন হয় না তা লেখক ব্যাখ্যা করলে আরো ভালো হতো।
(২) এত সুন্দর একটি বই অথচ তার কভার পেপারব্যাক। এতে বইটি কয়েকজন পড়তেই নষ্ট হওয়ার মত অবস্থা। বইটি তো আর আমি একা নয় বরং আমার পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই বইটি হার্ডকভার হলে ভালো হতো।
.
শেষ কথা : পরিশেষে বলতে হয় বর্তমান সমাজের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী এত সুন্দর আর সাজানো গোছানো একটি বই লেখার জন্য আল্লাহ লেখক কে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমীন।
.
বই : মানসাঙ্ক
রিভিউ লেখক : আবদুর রহমান