পুষ্টিবিদ এ.বি. সিদ্দিক
আমরা অনেকেই মনে করি সরিষার তেল নিয়মিত খেলে শরীরে বিশেষ করে হার্টের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। কেন আমরা এমনটা মনে করি? এর পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে সরিষাতে উপস্থিত একটি ফ্যাটি এসিড, যার নাম ইরুসিক এসিড।
১৯৪০ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত সরিষার তেল নিয়ে ইঁদুরের উপর বেশ কিছু গবেষণা হয়েছে এবং তাতে দেখা গেছে সরিষার তেল খাওয়ার ফলে ইঁদুরের adrenal gland এ কোলেস্টেরল জমা হয়েছে সেই সাথে হার্টে ফ্যাট জমা হওয়ার পাশাপাশি এর মাংস পেশিতে ক্ষত হয়েছে। এর কারণ হিসেবে তখন সরিষার তেলের ইরুসিক এসিডকে দায়ী করা হয়েছিল। ফলে সারা পৃথিবী জুড়ে সরিষার তেল খাওয়া মানুষের জন্য নিরাপদ নয় এমন একটা প্রচারণা শুরু হয়েছিল।
পরবর্তিতে অন্যান্য তেল যেমন সয়াবিন, অলিভ, বাদাম এবং সূর্যমুখী তেল দিয়েও ইঁদুরের উপর ঠিক এমনটা পরীক্ষা করা হয়েছিলো এবং তাতেও একই ফলাফল পাওয়া গিয়েছে, অর্থাৎ হার্টে ফ্যাট জমেছে। পরিশেষে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে এসেছে যে সম্ভবত ইঁদুর অরিক্ত ফ্যাট মেটাবোলাইজ করতে সক্ষম নয় এবং যেকোন ধরণের অতিরিক্ত ফ্যাটই তার জন্য ক্ষতিকর। এর জন্য নির্দিষ্টভাবে সরিষার ইরুসিক এসিডকে দায়ী করা সঠিক নয়।
গবেষকরা তখন ১৯৭৯ সালের দিকে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হন যে ইঁদুরের উপর গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে সরিষার তেল মানুষের জন্য ক্ষতিকর এমনটা মনে করা কখনই বিজ্ঞান সম্মত হবে না। কিন্তু তা বললে কি হবে, ততদিনে সারা পৃথিবীর মানুষ জেনে গেছে সরিষার তেল খারাপ। আর আমরাও তাঁর সাথে তাল মিলিয়ে নিজের ঘরের তেলকে বিদায় করে দিয়ে ঘরে নিয়ে এসেছি ভিনদেশী অতিথি সয়াবিন তেলকে।