

রাজকুমারীর আর্তনাদ
৳ 340.00 Original price was: ৳ 340.00.৳ 204.00Current price is: ৳ 204.00.
ফোনে অর্ডারের জন্য ডায়াল করুন
ডেলিভারি খরচ
ঢাকায় : ৳ ৫০.০০
ঢাকার বাইরের : ৳ ৯০.০০
দিল্লির শেষ বাদশাহ অনেকটা দরবেশ-প্রকৃতির ছিলেন। তার দরবেশি ও সাদাসিধা জীবনযাপনের বহু উদাহরণ আজও দিল্লি ও ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রসিদ্ধ। দিল্লিতে এখনো এমন অনেকে বেঁচে আছে, যারা এই সাধক পুরুষকে দেখেছে এবং নিজ-কানে তার দরবেশি কথাবার্তা শুনেছে। বাহাদুর শাহ বড় ইবাদতগুজার বাদশাহ ছিলেন। রাষ্ট্রের কাজকারবার সব তো ইংরেজদের হাতেই ছিল; তাই আল্লাহর জিকির-আজকার আর দরবেশি কথাবার্তা ছাড়া তার কোনো ব্যস্ততা ছিল না। দরবার বসত নিয়মিত; কিন্তু সেখানেও তাসাউফের সূক্ষ্ম কথাবার্তা হতো। আধ্যাত্মিকজগতের রহস্যাবলির আলোচনা হতো। যখন দিওয়ানে আম কিংবা খাসে দরবার বসত, দরবারিরা অপেক্ষায় থাকত বাদশাহর আগমনের আর বাদশাহ তার মহল থেকে বের হওয়ার জন্য কদম ওঠাতেন তখন এক মহিলা নকিব উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করত, ‘হুশিয়ার, আদবকায়দা নিগাহদার।’ মহিলা নকিবের কণ্ঠ দরবারের সকল পুরুষ নকিব শুনতে পেত। তখন তারাও বলে উঠত, ‘হুশিয়ার, আদবকায়দা নিগাহদার।’ এ ঘোষণা শোনামাত্র দরবারের সবাই নীরব হয়ে যেত এবং যার যার আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়াত। সকল আমির এবং উজির তাদের দৃষ্টি নিচু করতেন। দরবারজুড়ে পিনপতন নীরবতা নেমে আসত। এই অবস্থায় বাদশাহ দরবারে আগমন করতেন এবং নিজের আসনে বসতেন। এক নকিব ঘোষণা দিত, ‘জিল্লে এলাহি বর আমদ’—আল্লাহর ছায়া এসে গেছেন। এই ঘোষণা শুনে আমিররা এক এক করে বাদশাহর সামনে নির্ধারিত স্থানে গিয়ে দাঁড়াত। সেই স্থানকে ‘জায়ে আদব’ বলা হতো। সেখানে দাঁড়িয়ে তারা তিনবার কুর্নিশ করত। কুর্নিশ শেষে প্রত্যেক আমিরের মর্যাদা অনুযায়ী তার জন্য কিছু শব্দ বলা হতো এবং তার দিকে বাদশাহর মনোযোগ আকর্ষণ করা হতো। ধারাবাহিকভাবে দরবারিরা সবাই বাদশাহর সামনে উপস্থিত হয়ে কুর্নিশ করতেন। সব প্রথা-আচার পালন শেষ হলে বাদশাহ বলতেন, ‘আজ আমি একটা গজল শোনাব।’ এই বলে তিনি গজলের প্রথম পঙক্তি বলতেন। পঙক্তি শুনে একজন আমির উঠে দাঁড়াতেন। তিনি ‘জায়ে আদবে’ দাঁড়িয়ে বলতেন, ‘সুবহানাল্লাহ। কালামুল মুলুক, মুলুকুল কালাম।’ তারপর নিজের আসনে গিয়ে দাঁড়াতেন। এভাবে প্রতিটি পঙক্তি উচ্চারণের পর একেকজন আমির জায়ে আদবে দাঁড়িয়ে বাদশাহর প্রশংসা করে আসতেন।
বাহাদুর শাহ লোকজনকে মুরিদও করতেন। কেউ তার মুরিদ হলেই তার জন্য মাসিক ৫ রুপি ভাতা নির্ধারিত হয়ে যেত। এ কারণে প্রচুর লোক তার মুরিদ হয়। কেউ কেউ বলেন, বাহাদুর শাহ মাওলানা ফখর সাহেবের হাতে বাইয়াত ছিলেন। কিন্তু মাওলানা ফখর সাহেবের যুগে বাহাদুর শাহের বয়স খুবই কম ছিল। তিনি বাইয়াত হয়েছিলেন এর প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে তার শৈশবে তাকে মাওলানা ফখর সাহেবের কোলে রাখা হয়েছিল। মাওলানা ফখর সাহেবের ইনতেকালের পর তার উত্তরাধিকারী হজরত মিয়া কুতুবুদ্দিন-এর সাথে বাহাদুর শাহ-এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। বাহাদুর শাহ তার হাতেই বাইয়াত ছিলেন। মিয়া কুতুবুদ্দিন সাহেবের ছেলে মিয়া নাসিরুদ্দিন উরফে মিয়া কালেশাহ-এর সাথেও বাদশাহর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তিনি তার এক মেয়েকে মিয়া কালেশাহর কাছে বিয়ে দেন। বাহাদুর শাহ পির-ফকিরদের মহব্বত করতেন, তাদের সাথে সাক্ষাতের আগ্রহ রাখতেন, বিশেষভাবে খাজা নিজামুদ্দিন আউলিয়ার সাথে তার ছিল গভীর অন্তরঙ্গতা। প্রায়ই তিনি নিজামুদ্দিন আউলিয়ার মাজারে উপস্থিত হতেন। আমার নানা হজরত শাহ গোলাম হাসান চিশতির সাথে বাহাদুর শাহের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। নানাজি প্রায়ই লালকেল্লায় যেতেন এবং বাদশাহর ঘরোয়া বৈঠকে উপস্থিত থাকতেন। বাল্যকালে আম্মাজান আমাকে বাহাদুর শাহের অনেক ঘটনা শুনিয়েছেন। এসব তিনি তার বাবার কাছে শুনেছিলেন। আমি তখন খুব ছোট। বাহাদুর শাহের ব্যক্তিত্ব বুঝার মতো বয়স হয়নি। তবু এসব ঘটনা আমার মনে রেখাপাত করে। দুনিয়ার প্রতি একটা বৈরাগ্য ভাব সেই থেকেই আমার মনে জায়গা করে নেয়।